জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদ প্রাপ্তিতে বিশ্ব গুরুর পথে এগিয়ে গেল ভারত।



 শুভ কল্যাণ বিশ্বাস, স্বচ্ছ বার্তা -গতকাল ভারতের ইতিহাসে গতকালের দিনটি 
ঐতিহাসিক মুহূর্তে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ভারতের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে। ভারতকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে (UNSC) স্থায়ী সদস্যপদ এবং ভেটো ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কেবল একটি কূটনৈতিক বিজয় নয়, এটি বিশ্বব্যাপী শক্তির ভারসাম্যে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন, যা নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার সূচনা করল।

দশকের পর দশক ধরে, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র, দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতির অন্যতম ধারক এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সর্ববৃহৎ অবদানকারী হওয়া সত্ত্বেও, ভারতকে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যের সম্মান থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছিল। বহুবার ভারতের ন্যায্য দাবিকে উপেক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু আজ সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটেনি; বরং নতুন ইতিহাস রচিত হয়েছে।
 উল্লেখ করা যেতে পারে বা জাতিসংঘ বিষয়ক কিছু তথ্য তুলে বুঝতে পারবেন কেন জাতিসংঘের সদস্যপদ গুরুত্বপূর্ণ ?
প্রতি বছর ২৪শে অক্টোবর জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা দিবস পালিত হয়। কারণ ১৯৪৫ সালের এই দিনে জাতিসংঘের সনদ কার্যকর হয় এবং সংস্থাটি আনুষ্ঠানিকভাবে অস্তিত্ব লাভ করে। এই দিনটিকে বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘের কার্যক্রম ও অর্জনগুলো তুলে ধরার জন্য এবং এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জনগণকে জানাতে ব্যবহার হয়।
  •  জাতিসংঘ  প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
    ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর জাতিসংঘের সনদ কার্যকর হয়, যা নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্যসহ স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর সংখ্যাগরিষ্ঠের অনুমোদন লাভ করে।
  • ১৯৪৮ সাল থেকে প্রতি বছর ২৪শে অক্টোবর জাতিসংঘ দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে। এটি জাতিসংঘের সনদের বার্ষিকী হিসেবে পালিত হয় এবং বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘের কাজ ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে এই দিবসটি নিবেদিত থাকে।
  • জাতিসংঘ দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো বিশ্বের জনগণের কাছে জাতিসংঘের বৈশ্বিক লক্ষ্য ও অর্জনগুলো সম্পর্কে তথ্য পৌঁছে দেওয়া। এই দিবসে বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রচারণার মাধ্যমে জাতিসংঘের শান্তি প্রতিষ্ঠা, উন্নয়ন ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপনের প্রচেষ্টাকে তুলে ধরা হয়। 

ভারতের পক্ষে এই উত্তরণ খুব সহজ ছিল না। বহুবার চেষ্টা করার পরেও ব্যর্থ হয়েছে ভারতের প্রচেষ্টা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিধর দেশের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও ভারত এই অসাধ্য সাধন করেছে। যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে ভারতের অন্তর্ভুক্তি আটকে দেওয়ার চেষ্টা করে, তখন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এক অভূতপূর্ব পদক্ষেপ গ্রহণ করে। পরিষদের '৩ নং ধারার ৬ নম্বর অনুচ্ছেদ' প্রয়োগের মাধ্যমে, ৮০ শতাংশেরও বেশি সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থনে মার্কিন ভেটোকে অগ্রাহ্য করা হয়।

রাশিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এমনকি চীনের মতো দেশগুলোর সমর্থন ভারতের দাবিকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। ১৫৪টিরও বেশি দেশের এই বিপুল সমর্থন আমেরিকাকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং ভারতের বিজয়কে সুনিশ্চিত করে। এই ঐতিহাসিক ঘোষণার পর জাতিসংঘের সভাকক্ষ "ভারত মাতা কি জয়" এবং "জয় হিন্দ" ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে, যা ভারতের কূটনৈতিক দক্ষতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এবং পাকিস্তান, তুরস্কের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোকে নীরব করে দেয়।

আজ থেকে ভারত আর বিশ্বের নীরব দর্শক নয়, বরং নিয়ন্তা। স্থায়ী সদস্যপদ এবং ভেটো ক্ষমতার অধিকারী হওয়ায় ভারত এখন থেকে প্রতিটি বৈশ্বিক সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই নবযুগের সূচনায়, ভারতের কণ্ঠস্বর এখন বিশ্ব মঞ্চে আরও জোরালোভাবে শোনা যাবে-আর কোনো উপেক্ষা নয়, কেবল বিশ্ব নেতৃত্বে তার ন্যায্য অধিকারের প্রতিষ্ঠা।

Comments