সাংস্কৃতিক উন্নতির জন্য সংগীতের কর্মশালার আয়োজন করল সংস্কার ভারতী
স্বচ্ছ বার্তা,মিলন খামারিয়া, হাওড়া,
৩ সেপ্টেম্বর; সংগীত সকল স্তরে পরিব্যাপ্ত। সংগীত মানবজীবনের হাসি, কান্না, আনন্দ, বেদনা, সুখে ও দুঃখে সান্ত্বনার প্রলেপ। জীবনের উৎসবে সংগীত নিত্যসঙ্গী। এই ধারাবাহিকতায় প্রাথমিক স্তর থেকে শিশু, কিশোর -কিশোরী, যুবক-যুবতী এবং সংগীত প্রেমী প্রশিক্ষণার্থীদের গীতি ও সুরের ছোঁয়ায় আকৃষ্ট করতে সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ, ২৯ - ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত, আয়োজন করল তিন দিনের লঘু শাস্ত্রীয় সংগীতের কর্মশালা। হাওড়া জেলার বাগনান লাইব্রেরী মোড়ের কাছে বাগনান হিন্দু মিলন মন্দির ও সরস্বতী আশ্রমে আয়োজিত হয় এই কর্মশালা।
অংশগ্রহণকারী ৫৬ জন ছাত্রছাত্রী ও ততোধিক অভিভাবক - অভিভাবিকাদের উপস্থিতিতে আশ্রম কক্ষ মুখরিত হয়ে ওঠে। প্রারম্ভিক পর্যায়ে অতিথি এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের চন্দন ও উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। উপস্থিত ছিলেন সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের মাতৃশক্তি প্রমুখ মহাশ্বেতা চক্রবর্তী, খ্যাতিমান শিল্পী ধ্রুবজিৎ ভট্টাচার্য, প্রদেশের সংগীত টোলির সদস্যা অনিমা দাস মজুমদার ও তনুশ্রী মল্লিক। বাগনান হিন্দু মিলন মন্দির ও সরস্বতী আশ্রমের সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তী। এছাড়াও ছিলেন আমতা ব্লকের প্রাক্তন বি.ডি.ও. সাহেব ও উত্তর ২৪ পরগণার বারাসাতের প্রাক্তন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ফটিক চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন হাওড়া গ্রামীণ জেলার সাহিত্য কলা বিধা প্রমুখ ডাঃ অর্পণ চৌধুরী।
দীপ মন্ত্র সহযোগে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন মহাশ্বেতা চক্রবর্তী। হাওড়া গ্রামীণ জেলার সহ-সভাপতি দিব্যেন্দু চক্রবর্তী, আমন্ত্রিত অতিথি গণ ভারতমাতার প্রতিকৃতি ও নটরাজ মূর্তি তে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন। আচার্য শ্রীমৎ স্বামী প্রণবানন্দ মহারাজের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন ফটিক চক্রবর্তী।
হাওড়া গ্রামীণ জেলার সদস্য ও সদস্যাগণ দ্বারা পরিবেশিত হয় সংস্কার ভারতীর ভাব সংগীত । উপস্থিত অতিথিরা সংগীত বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। শিশুর শারীরিক, মানসিক ও নান্দনিক বিকাশে শাস্ত্রীয় সংগীতের অপরিহার্যতা সম্বন্ধীয় বক্তব্য প্রাঞ্জল ভাষায় প্রকাশ করেন।
প্রশিক্ষণার্থীদের পরিচিতি নেওয়ার পর কর্মশালায় সংগীতের সংজ্ঞা, শ্রেণিবিভাগ, তাল, লয়, ছন্দ সম্পর্কে সুচারুভাবে সমৃদ্ধ করেন সংগীত প্রশিক্ষক ধ্রুবজিৎ। হাওড়া গ্রামীণ জেলার সম্পাদক স্বরূপ মিত্র তবলায় সহযোগিতায় করেন। এছাড়াও আরও দুজন বিশিষ্ট তবলা বাদক উত্তম সরকার ও অংশুমান ভৌমিক সাথে ছিলেন।
ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ অনুমোদিত বাগনান হিন্দু মিলন মন্দির ও সরস্বতী আশ্রমে অধিষ্ঠিত গুরু মহারাজের ঐশ্বরিক আশীর্বাদ সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের শিরে বর্ষিত হওয়ায় ভজন গীতি ও আগমনী গান অংশগ্রহণকারীদের কন্ঠে সুমিষ্ট হয়ে উঠেছিল। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে প্রশিক্ষক ধ্রুবজিতের কঠোর পরিশ্রম ও আন্তরিক তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীদের একাগ্রচিত্তে পাঠ গ্রহণ পর্বে কর্মশালার অনুষ্ঠানটি এক অনন্য সুন্দর মাত্রা পায়।
প্রশিক্ষণ শেষে শিক্ষার্থীরা ও তাদের অভিভাবক -অভিভাবিকাগণ একটি জমকালো সমাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। তারা পুষ্পস্তবক, মিষ্টি ও একাধিক উপহার প্রিয় প্রশিক্ষকের হাতে তুলে দেন। তারা ভীষণ আনন্দিত হন এমন প্রশিক্ষণ শিবিরে নিজেদের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করাতে পেরে।কর্মশালার সমাপন অনুষ্ঠানে চঞ্চল চক্রবর্তী, দিব্যেন্দু চক্রবর্তী ও তনুশ্রী মল্লিক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। শিক্ষার্থীরাও তাদের অনুভবের কথা ব্যক্ত করে।এরপর অতিথি গন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণকারীদের হাতে শংসাপত্র তুলে দেন। সংগীতের কর্মশালার শুভ সমাপ্তি হয় প্রশিক্ষক ধ্রুবজিৎ ভট্টাচার্যর বলিষ্ঠ কণ্ঠে রাষ্ট্র বন্দনা - ‛বন্দে মাতরাম’ গানের মাধ্যমে।
এই প্রশিক্ষণ বর্গ সম্পর্কে শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পী স্বরূপ মিত্র বলেন, গ্রামীণ অঞ্চলে সংগীত চর্চা আরও বেশি করে করা উচিত। সংগীত মানুষের মনকে সুন্দর করে। এই জেলার লোকেরা সংগীতের মাধ্যমে একে অন্যের সাথে যুক্ত হয়ে সমাজের সাংস্কৃতিক উন্নতি করুক, সেই উদ্দেশ্য নিয়েই আমরা এই কর্মশালার আয়োজন করেছি। ভবিষ্যতে এমন কর্মশালা আমরা আরও করতে চাই।
Comments
Post a Comment