স্বচ্ছ বার্তা,পূর্ব বর্ধমান, নিজস্ব প্রতিনিধি - ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর 'স্বদেশী' আহ্বানকে জানিয়েছে 'স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ'। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, স্বদেশী পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করাও জাতির জন্য একটি সত্যিকারের সেবা।
প্রধানমন্ত্রীর এই ভাবনাকে স্বাগত জানিয়ে গতকাল, ৪ ঠা আগস্ট, 'স্বাবলম্বী ভারত অভিযান'(মধ্যবঙ্গ প্রান্ত)-এর পক্ষ থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। তাতে জানানো হয়েছে, ১৯৯১ সালের ২২ শে নভেম্বর 'স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ' প্রতিষ্ঠার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে স্বদেশী দ্রব্য গ্রহণের জন্য জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করে আসছে এই সংগঠন। এই মঞ্চ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, আমাদের জাতি কেবল স্বদেশী এবং স্বনির্ভরতার ভিত্তিতেই সমৃদ্ধ হতে পারে।
বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তার বর্তমান পরিস্থিতিতে - যেখানে বিশ্বব্যাপী মূল্য শৃঙ্খল, অর্থপ্রদান ব্যবস্থা এবং বৈশ্বিক মুদ্রাগুলিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশগুলি ক্রমশ সুরক্ষাবাদী হয়ে উঠছে এবং শুল্ক প্রাচীর ও অন্যায্য শুল্ক বাধা ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী রপ্তানি বন্ধ করে দিচ্ছে।
কিছু দেশ, বিশেষ করে - চীন, অতিরিক্ত ক্ষমতার ভিত্তিতে পণ্য ডাম্প করছে এবং আমাদের উৎপাদন বন্ধ করার ষড়যন্ত্র করছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বদেশী একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হতে পারে আমাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করার ক্ষেত্রে। যদিও প্রধানমন্ত্রী ভারতীয়দের বিদেশে গিয়ে বিবাহ করা এড়িয়ে চলার উদাহরণ দিয়েছেন তবে স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ বিশ্বাস করে যে, মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের জন্য আরও অনেক ব্যবস্থা থাকতে পারে। সাধারণভাবে বিদেশী পণ্যের ব্যবহার কমিয়ে আনা এবং চীন, তুরস্ক এবং অন্যান্য শত্রু দেশের পণ্য ও পরিষেবা বর্জন করা; বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার প্রলোভন ত্যাগ করা, স্থানীয় পণ্য ব্যবহার করা এবং কারিগরদের উৎসাহিত করা, কেবল মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করতে সাহায্য করতে পারে না বরং উন্নয়নের বিকেন্দ্রীভূত মডেলের উপর ভিত্তি করে স্থানীয়ভাবে মানুষের কর্মসংস্থান, জীবিকা এবং কল্যাণকেও উন্নীত করতে পারে।
১২ই জুন, ২০২৫ তারিখে স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ কর্তৃক বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ী, শিল্প-সমিতি এবং সামাজিক সংগঠনের সহযোগিতায় 'স্বদেশী, সুরক্ষা ও স্বাবলম্বন অভিযান' চালু করার মাধ্যমে, স্বদেশী আন্দোলনকে একটি নতুন প্রেরণা দেওয়া হয়েছে - যার লক্ষ্য হল ভারতকে আবার মহান করে তোলার জন্য দেশের প্রতিটি কোণে কোণে সচেতনতা তৈরি করা, যাকে প্রধানমন্ত্রী 'MIGA' ( Make India Great Again) বলেছেন।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে স্বদেশী আন্দোলন কেবল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধেই নয়, ব্রিটিশ পণ্যের বিরুদ্ধেও ছিল। অর্থনৈতিক মর্যাদা, সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং সভ্যতার সার্বভৌমত্বেরও দাবি ছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাথমিক পর্যায়ে শুরু হওয়া স্বদেশী আন্দোলন আসলে বিদেশী পণ্য প্রত্যাখ্যান, দেশীয় উৎপাদন পুনরুদ্ধার এবং ভারতের স্বনির্ভর অর্থনৈতিক বাস্তুতন্ত্র পুনর্গঠনের আহ্বান ছিল।
রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি, নীতিগত হস্তক্ষেপ এবং জনগণের অংশগ্রহণ কিছু ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জনে ইতিবাচক ফলাফল দেখিয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, স্থানীয়ভাবে একটি কোভিড ভ্যাকসিন উদ্ভাবন এবং উৎপাদন ক'রে ভারত কেবল তার কোটি কোটি নাগরিকের জীবন বাঁচাতে পারেনি বরং সমগ্র বিশ্বের একটি বিশাল জনসংখ্যাকে বাঁচাতেও সাহায্য করেছে। প্রতিরক্ষা খাতে স্বনির্ভরতা ইতিমধ্যেই বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছে; স্বনির্ভর ডিজিটালাইজেশন, মহাকাশ বিদ্যায় খ্যাতি এবং অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা স্বদেশীর শক্তির জীবন্ত উদাহরণ।
চীন দীর্ঘদিন ধরে ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার, কিন্তু এই সম্পর্ক ক্রমশ একতরফা হয়ে উঠেছে, যা বিপজ্জনক। চীনের সাথে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বর্তমানে ৯৯.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। সস্তা এবং প্রায়শই নিম্নমানের পণ্য ভারতীয় বাজারে প্রবেশ করছে, যা আমাদের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে; কর্মসংস্থান ধ্বংস করছে এবং দেশীয় উৎপাদন ক্ষমতা দুর্বল করছে। আরও উদ্বেগজনকভাবে, চীন এই অর্থনৈতিক সুবিধা ব্যবহার করে তার ভূ-রাজনৈতিক আগ্রাসনকে অর্থায়ন এবং প্রচার করছে - যেমন টি গালওয়ান, ডোকলাম এবং অন্যান্য সীমান্ত অচলাবস্থায় দেখা গেছে বলে মনে করছে এই সংগঠন।
নতুন ডিজিটাল কোম্পানি গুলি একচেটিয়া - অ্যামাজন, ওয়ালমার্ট (ফ্লিপকার্ট) এবং অন্যান্য পশ্চিমা ই-কমার্স জায়ান্ট হল একবিংশ শতাব্দীর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। এই প্ল্যাটফর্মগুলি ভারতের ঐতিহ্যবাহী খুচরো বাণিজ্যকে দুর্বল করে দিচ্ছে এবং লক্ষ লক্ষ ছোট ব্যবসায়ীকে প্রান্তিক করছে।
স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ দেশের প্রতিটি নাগরিককে 'স্বদেশী, সুরক্ষা এবং স্বাবলম্বন অভিযান'-এর অংশ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে, যার একমাত্র লক্ষ্য আমাদের ভারতকে আবার মহান করে তোলা।
এই বিষয় নিয়ে স্বাবলম্বী ভারত অভিযান-এর মধ্যবঙ্গ প্রান্তের সহ-সমন্বয়ক মিলন খামারিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমরা চাই, আমাদের দেশের মানুষ দেশীয় পণ্য ব্যবহার করুক, তাতে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। বিদেশি কোম্পানি এখানে ব্যবসা করে মুনাফা ক'রে, তাদের দেশে নিয়ে গিয়ে অনেক সময় আমাদের ক্ষতি করার জন্যই তার ব্যবহার করছে। পাকিস্তান, বাংলাদেশ, চীন, তুরস্ক ইত্যাদি দেশ আমাদের প্রত্যক্ষ ভাবে ক্ষতি করছে। এই সব দেশের পণ্য ব্যবহার করা মানে নিজেদের অর্থনৈতিক ক্ষতি করা ও দেশের মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া। তাই আগামী ১০ ই আগস্ট আমরা বিদেশি কোম্পানি ভারত ছাড়ো অভিযানের ডাক দিয়েছি। এই অভিযানে দেশের প্রতিটি মানুষকে অংশগ্রহণ ক'রে বিদেশি সংস্থা ও তাদের উৎপাদিত পণ্য বয়কট করার জন্য আহ্বান জানাই।
Comments
Post a Comment