স্বচ্ছ বার্তা,মিলন খামারিয়া, সিউড়ি বীরভূম -
নতুন প্রজন্মের মধ্যে লোকগানের গুরুত্বকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য দু'দিনের কর্মশালার আয়োজন করেছিল সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ। গত ২ ও ৩ রা আগস্ট'২৫ সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের উদ্যোগে 'লোককলা বিধা'র দ্বি-দিবসীয় রাজ্যস্তরীয় লোকসঙ্গীত কর্মশালা আয়োজিত হয়েছিল সিউড়ির 'প্রভাত জ্যোতির্ময়ী জ্ঞানপীঠ কেন্দ্র' প্রাঙ্গণে। প্রশিক্ষকের ভার গ্রহণ করেছিলেন সঙ্গীত নাটক একাডেমী দ্বারা জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত লোকসঙ্গীত বিশেষজ্ঞ ও শিল্পী ড. স্বপন কুমার মুখোপাধ্যায়।
স্বাধীনতার মাসে সিউড়ি শহরে প্রভাত জ্যোতির্ময়ী কলেজ প্রাঙ্গণে গম্ভীরা গানের সুরে লোকগানের কর্মশালার মাধ্যমে ভেসে উঠল স্বাধীনতা উত্তর যুগের মানুষের সামাজিক দুঃখ দুর্দশা ও অভাব অভিযোগের দিনলিপি। দুদিনের এই কর্মশালায় বীরভূমের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় 40 জন বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছিলেন।
কর্মশালার প্রথম দিনে সংস্কার ভারতীর ধ্যেয় গীতির মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। বিশেষ অতিথিরূপে বরণ করে নেওয়া হয় প্রশিক্ষক ড. স্বপন কুমার মুখোপাধ্যায়, পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাপক শিল্পী রতন কাহার, সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ সম্পাদক তিলক সেনগুপ্ত ও প্রভাত জ্যোতির্ময়ী জ্ঞানপীঠ কেন্দ্রের কর্ণধার লছ্মণ বন্দ্যোপাধ্যায় কে। প্রদীপ প্রজ্বনন ও অতিথি বরণের মধ্যে দিয়ে কর্মশালার শুভ সূচনা হয়।
লোকগান ও লোকসঙ্গীত হল ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীতের ধারা, যা নির্দিষ্ট একটি সম্প্রদায় বা অঞ্চলের মানুষের মৌখিক ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সাথে সম্পর্কিত। এটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মধ্যে গানের মাধ্যমে সঞ্চারিত হয়। গম্ভীরার মতই ঝুমুর এবং ভাওয়াইয়া হল লোকসঙ্গীতের আরো দুটি সমৃদ্ধ অথচ লুপ্তপ্রায় ধারা।
এই কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য ছিল নতুন প্রজন্মের মধ্যে এই লোকগানের গুরুত্বকে পৌঁছে দেওয়া ও ধারাগুলিকে উজ্জীবিত করা। কর্মশালাতে প্রতিটি গানের উৎপত্তি, বৈশিষ্ট্য ,জন্মকথা, অঞ্চলভেদে উচ্চারণের রদবদল এবং নানা ভঙ্গিতে সুরের প্রক্ষেপণ - বিভিন্ন বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। কর্মশালার শেষে বীরভূমের সঙ্গীতপ্রেমী মৌসুক্তি সরকার সাথে প্রভাত শিকদার মিলে জানিয়েছেন, দু'দিনের কর্মশালায় লোকসঙ্গীতের প্রতি ভালবাসা আরো বৃদ্ধি পেল। আগামীতে আরও এরূপ কর্মশালার অপেক্ষায় আমরা থাকবো।
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের হাতে শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয়। কর্মশালার শেষ দিনে মঞ্চ আলোকিত করেছিলেন বীরভূমের স্বনামধন্য সঙ্গীত শিল্পী মানবী সরকার ও বাসুদেব কর্মকার।
লোকসঙ্গীতের উপর এই কর্মশালা প্রসঙ্গে সাধারণ সম্পাদক তিলক সেনগুপ্ত বলেন, সংস্কার ভারতী চায় পশ্চিমবঙ্গের হারিয়ে যাওয়া লোক সঙ্গীতের ধারা কে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে। তাই জেলায় জেলায় আমরা এই কর্মশালার উদ্যোগ নিয়েছি। লোকসঙ্গীত আমাদের সংস্কৃতির অন্যতম অংশ, তা হারিয়ে গেলে সংস্কৃতির পাশাপাশি ইতিহাসও নষ্ট হয়ে যাবে।
Comments
Post a Comment