দুই জন মতুয়া মহারাষ্ট্রের জেলে আছে তাঁদের দোষ কি তারা নিজেরাও জানে না।

দীপশিখা ব্যানার্জী, স্বচ্ছ বার্তা ,কোলকাতা -
ভারত সরকার গত কয়েক মাস হল CAA চালু করেছে। পাকিস্তান আফগানিস্তান শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশ সহ প্রতিবেশী দেশ গুলি থেকে যদি কোনো হিন্দু অত্যাচারিত হয়ে ভারতে আসে তবে সে ভারতের নাগরিকত্ব পাবে।নতুন CAA আইনে এই কথা বলা আছে। এই আশায় অনেক উদ্বাস্তু মতুয়া সম্প্রদায়ের লোক পশ্চিমবঙ্গ,আসাম, বিহার, ঝাড়খন্ডে এসে বসবাস শুরু করেছে। অনেকেই হয়তো টাকা পয়সা খরচ করে ভোটার  কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড তৈরি করে নিয়েছে। এর মধ্যে কেউ আবার পাসপোর্ট করে বাংলাদেশ থেকে এসেছে  কেউ আবার চোরাপথে  এসেছে। কিন্তু এরা শরণার্থী কেউ অনুপ্রবেশকারী নয়। কিন্তু এই সমস্ত মানুষগুলোকে যেভাবে বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশন থেকে ধরে নিয়ে বাংলাদেশী বলে চালান দেওয়া হচ্ছে সেই পরাধীন ভারতের ব্রিটিশের তৈরি আইনের বলে। কারোর কাছ থেকে মোটা টাকা আদায় করে তাকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে আর যারা টাকা দিতে পারছে না তাদের কে জেলে পুরে দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে আসার ফলে এদের কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে এই উদ্বাস্তু শরণার্থীরা। বিশেষ করে গুজরাট রাজস্থান, ব্যাঙ্গালোর, মহারাষ্ট্র,কেরালা, এইসব রাজ্যে কর্মসংস্থানের তাগিদে তারা যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের এই সমস্ত উদ্বাস্তু মতুয়াদের কাছে ভোটার আধার কার্ড থাকার পরেও  গ্রেফতার করে জেলে রাখা হচ্ছে। এমনকি এদের প্রায় সকলের কাছে শান্তনু ঠাকুরের নেতৃত্বে,যে মতুয়া  সংগঠন গড়ে উঠেছে (অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘ )তার কার্ডও আছে। 
 তারপরও এদেরকে রাস্তায় ধরে হেনস্তা করা হচ্ছে। বিশেষ করে বনগাঁ রেলওয়ে স্টেশন এবং রানাঘাট রেলওয়ে স্টেশনে প্রচুর বাংলাদেশী উদ্বাস্তু মানুষকে ধরে জেলে রাখা হচ্ছে। যাদের টাকা আছে তারাই একমাত্র এই টাকা দিয়ে ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যারা টাকা দিতে পারছে না তারা জেলে পচে মরছে।
 এর একটি সুষ্ঠু সমাধান প্রয়োজন। যখন ভারত সরকার এদেরকে এনআরসির আওতায় এনে নাগরিকত্ব দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে। তবে সেখানে কেন এদেরকে এরেস্ট করা হবে। বরং এদেরকে সুষ্ঠুভাবে নাগরিকত্ব পেতে সাহায্য করা উচিত। যেখানে ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা করেছেন, প্রত্যেকটি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে, এবং অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সংজ্ঞাধিপতি ও বনগাঁ লোকসভার সাংসদ ও জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর নিজে বলেছেন, মতুয়া কার্ড থাকলেই তারা  ভারতের নাগরিকত্ব জন্য এনআরসির আওতায় দরখাস্ত করতে পারবে। তবে কেন পশ্চিমবঙ্গ সহ বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করছে। মহারাষ্ট্র পুলিশ এর কাছে অ্যারেস্ট হয়েছেন দুইজন 
 রানাঘাটের মতুয়া ভক্ত  মনি শংকর বিশ্বাস এবং নির্মল বিশ্বাস। তারা দুইজন মতুয়া কার্ড বানিয়েছিল নাগরিকত্ব পাওয়ার আশায়।
তবুও মতুয়া কার্ড তৈরি করে শেষ রক্ষা পায়নি। তাঁরা দুই ভাই  বিদেশি, এই অভিযোগে বিগত পাঁচ মাস যাবৎ *মহারাষ্ট্রের আকোলার কারাগারে বন্দী। কেউ খোঁজ নেওয়ার লোক নেই।
 তাদের পরিবারের তরফ থেকে সকলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা এখনো জেল থেকে মুক্তি পায়নি। মতুয়া মহা সংঘের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি এখন এই ক্ষেত্রে। তারা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘ এর সাংঘাধিপতি  শান্তনু ঠাকুরের কাছে আবেদন করেছেন, মতুয়া ভক্ত মনি শংকর বিশ্বাস এবং নির্মল বিশ্বাস অবিলম্বে মুক্তি পায়। 
 এদের দুজনেরই মতুয়া কার্ড আছে।
মনীশঙ্কর এর বাবা নিশিকান্ত বিশ্বাস রায়নগর নাজিরপুরের বাসিন্দা। তিনি খুবই গরীব। তার ছেলের মুক্তির জন্যে অনেক জায়গায় ঘোরাঘুরি করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। রানাঘাট লোকসভার সাংসার জগন্নাথ সরকার  এবং বনগাঁ লোকসভার সংসদ শান্তনু ঠাকুরের কাছে আবেদন করেছেন তার ছেলের মুক্তির জন্যে। 
 নিখিল ভারত সমন্বয় সমিতির  পক্ষ থেকে মনিশঙ্কর বিশ্বাসকে আইনি সহায়তা দেয়ার কাজ করা হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তার মুক্তির জন্য  তারা সংগ্রাম করে চলেছে। একই সময়ে নাসিক এবং অরঙ্গবাদী দুজন ডাক্তার টি অ্যারেস্ট করা হয়। তারা জামিন আছে। দিল্লির চারজন বাঙালি চাঁদসী ডাক্তার কে পুলিশ ২৪ ঘন্টা থানায় বসে রেখেছিল। স্থানীয় বাঙালিদের সহযোগিতায় তারা সাময়িক আইনি নির্যাতন থেকে অব্যাহতি পেয়েছে।
উড়িষ্যার পাকানজোরের সন্দরী বিড়ি কোম্পানির মালিক কে বিদেশী অভিযোগে নোটিশ করা হয়েছে। তার বাড়ি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। 
বারবার ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ছিন্নমূল বাঙালিরা CAA আবেদন করতে চান, কিন্তু কোথায় পাবেন তাদের পূর্ব বাংলার ডকুমেন্টস।

Comments